মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল-মাঝে. আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে, ভ্রমি বিস্ময়ে ॥
বিষ্ণুভক্ত রাজা সূর্যবর্মন ২ এর কথা বলি , যিনি কোন সেই যুগে ভারতবর্ষের বাইরে সারা বিশ্বকে চমৎকৃত করে দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন আজকের ক্যাম্বোডিয়ায় । মহাবিশ্বের প্রতিনিধিত্বের কথা মাথায় রেখেই খেমের সম্রাট সূর্যবর্মন ২ এই মন্দিরটিকে নকশায়িত করেছিলেন । সেভাবেই ওনার আদেশে মন্দিরটিকে নির্মাণ করেছিলেন ক্যাম্বজের শিল্পী ও প্রকৌশলীরা। প্রবেশপথ সহ সম্পূর্ণ মন্দিরটিকে পশ্চিমদিক থেকে শুরু করে পূর্বদিক বরাবর বিস্তৃত করে নির্মাণ করা হয়েছিল। হিন্দু ধর্মে বর্ণিত সুমেরু পর্বতের আদলেই পর্বতের মতন বিস্তৃত মন্দিরটিকে নির্মাণ করা হয়েছিল। ভালো করে লক্ষ করলে দেখতে পাবেন নির্মাণটি কিন্তু পাঁচটি সুউচ্চ স্তম্ভ দ্বারা সুশোভিত। এই পাঁচটি স্থম্ভ সুমেরু পর্বতের পাঁচটি শৃঙ্গের প্রতীকস্বরূপ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল । মন্দিরে প্রবেশ করলে এর কেন্দ্রে যে কেন্দ্রীয় স্তম্ভটি দেখতে পাবেন সেটি নাকি মাউন্ট মেরু বা সুমেরু পর্বতের প্রতীক স্বরূপ নির্মিত, তবে এই প্রাসাত বা Bakan মন্দিরটি ভগবান নারায়ণ বা বিষ্ণুদেব এবং তস্য পত্নী লক্ষীদেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয়েছিল। পশ্চিমের পরিখার পাশে দাঁড়িয়ে ডানদিকে আরো দুটি মন্দিরচূড়া বা প্রাসাত এবং বাঁয়েও দুটি প্রাসাত দেখতে পাবেন। ডাইনের দিকের সামনের প্রাসাত মন্দিরটি ব্রহ্মা এবং পিছনের মন্দিরটি হচ্ছে সরস্বতী মন্দির। বাম দিকের সামনের মন্দিরটি শিব এবং পিছনের মন্দিরটি হচ্ছে পার্বতী মন্দির।
মন্দিরটি চারদিকে বেষ্টিত এই পরিখা যেন মনুষ্যনির্মিত কোন স্থাপনা নয়, সুমেরু পর্বতকে বেষ্টন করে থাকা মহাসাগরের প্রতিনিধিত্ব করছে। সেই সূত্রেই নির্মাণ করা মন্দিরের দেওয়ালের উপর বিভিন্ন ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে হিন্দু পুরান বর্ণিত সমুদ্র মন্থন দৃশ্য। নিরাপত্তা বেষ্টনী, নগরীর জলসরবরাহ এবং Hydraulic Architecture ছিল পরিখা এবং পুষ্করনী নির্মাণের আসল উদ্দেশ্য।