“গানই আমার প্রাণ, গানই আমার ভগবান,
গান গেয়ে গেয়ে যায় চলি এ প্রাণ,
যেখানে কেউ নাই সেথা দিও স্থান।
ভবার পরম আত্মা, গানই সাধন সত্ত্বা,
গানেই বাধ্য করে চঞ্চল প্রাণ।
জানি না সাধনা, জানি না উপাসনা,
ভবার বাসনা শুধু গানই প্রধান।”
গানের ছন্দে ভবাপাগলা এইভাবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ছিলেন এমনই প্রাণখোলা স্বভাবের মানুষ, তাঁর সংস্পর্শে যে যখন এসেছেন তাঁকেই তিনি আপন করে নিয়েছিলেন। একজন ধার্মিক ব্যক্তি হয়েও তাঁর মধ্যে ছিল না কোনো আচার-বিচার, ভিন্ন ভেদ, কু-সংস্কারচ্ছন্নতা। শত্রু- মিত্র ভাবনাও তাঁর মধ্যে কখনও দেখা যেত না। জাতিভেদ প্রথা তিনি মানতেন না। মানতেন না খাদ্য নিয়ে আচার-বিচার। তিনি বলতেন তুমি সব খাবে, শুধু নিজের মাথা খাবে না। তিনি মনে করতেন মনুষ্যত্ব হারানো ও চরিত্রহীনতাই নিজের মাথা খাওয়া। মনে করতেন দেশকাল ভেদে সহজলভ্য, সহজপাচ্য খাদ্য খেলে ধর্ম নষ্ট হয় না। ধর্ম এত ঠুনকো জিনিস নয় যে হাত থেকে পড়ে ভেঙে যাবে। শাশ্বত সত্যই ধর্ম।
শ্রদ্ধেয় শ্রীসত্যানন্দ গিরি ভবাপ্যদলা সম্পর্কে লিখেছিলেন, ভবাপাগলার মধ্যে শান্ত, দাস্য, বাৎসল্য, সখ্য, মধুরাদি পঞ্চভাবের সমন্বয় ঘটেছিল। প্রেম, ভক্তি, কর্ম, জ্ঞান সমস্ত যোগমার্গের সমন্বয় ভবা। ভবাকে ভাবা, ভবাকে বোঝা বা বিশ্লেষণ করা সাধারণ মানুষের পক্ষ্যে দুঃসাধ্য; হয়তো বা অসাধ্যও।
(ভবাপাগলা, লেখক সত্যানন্দ গিরি, পৃষ্ঠা ৬)
তবুও সকলের জ্ঞাতার্থে ভবাপাগলাকে জানতে ও সকলকে জানাতে বদ্ধপরিকর হয়েছি এই দুঃসাধ্য কাজটিকে সাধ্যমতো লিখতে।